মুজিববাদের কবর শেখ হাসিনাই দিয়েছে: শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, এনসিপি সারাদেশে প্রোগ্রাম দিয়েছে জনসংযোগের। হঠাৎ করে তারা প্রোগ্রাম দিয়েছে তারা মার্চ টু গোপালগঞ্জ। একদিনের ব্যবধানে পরিবর্তন। আমি মনে করি এটি তলিয়ে দেখা দরকার, পেছনে কোন হীন উদ্দেশ্য আছে কি না। কারণ সামনে তো নির্বাচন, এ ধরনের গণ্ডগোল যদি হয়ে যায়, নির্বাচনটা প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে, পড়বে। যে নির্বাচন নিয়েই এখন পর্যন্ত এতোগুলো কথা হচ্ছে। তাহলে আপনারা কিভাবে গেলেন, কিভাবে বের হয়ে আসলেন।

 

শুক্রবার (১৮ জুলাই) সন্ধ্যায় জেলা শহরের উত্তর তেমুহনীর বালিকা বিদ্যানিকেতন মাঠে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শহীদদের স্মরণে আয়োজিত স্মরণসভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। জেলা বিএনপির উদ্যোগে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

তিনি বলেন, মুজিববাদের যদি কবর দিতে হয়, গোপালগঞ্জ যাওয়ার দরকার নেই। মুজিববাদের কবর মুজিববাদই দিয়েছে। মুজিববাদের কবরতো ৭২,৭৩, ৭৪, ৭৫, গত ১৭ বছর শেখ হাসিনাই দিয়েছে। আমার-আপনার আন্দোলনের মধ্য দিয়েই মুজিববাদের কবর হয়েছে। মুজিববাদের কবর গোপালগঞ্জে গিয়ে দিতে হবে না। সকালবেলায় ইউএনওর গাড়ি, পুলিশের গাড়ি নিরাপত্তাহীনতায়, তাহলে চিন্তা করা দরকার ছিল,পরবর্তী কর্মসূচি-ধাপটা কি ধরনের হবে, হওয়ার দরকার ছিল। তাৎক্ষণিক সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাৎক্ষণিকমধ্যে আলোচনার দাবি রাখে।

এ্যানি বলেন, গোপালগঞ্জে পুলিশের গাড়িতে আগুন দিয়েছে, ইউএনও’র গাড়িতে আগুন দিয়েছে। তার আগের দিন সন্ত্রাসীরা বাইক মিছিল করেছে, যেন গোপালগঞ্জে এনসিপি যে প্রোগ্রাম দিয়েছে, তারা যেন না যেতে পারে। এরপরের ঘটনাগুলো খুবই দৃশ্যমান। ওই ফ্যাসিস্ট যারা ১৭ বছর অত্যাচার করেছে, নির্যাতন করেছে, খুন করেছিল, গুম করেছিল, হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণ করে শিশুদের হত্যা করেছে, সাধারণ মানুষদের হত্যা করেছে, আমার নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে। গোপালগঞ্জে ঢাল নিয়ে, তলোয়ার নিয়ে, দেশিয় অস্ত্র নিয়ে সাধারণ মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আমার ক্ষোভ তো এখানেই, এ প্রশাসন ইউএনও সাহেবের প্রশাসন, আমরা সবাই মিলে তো সহযোগিতা করছি, আমরা সমর্থন দিচ্ছি আন্দোলনের ফসল হিসেবে। কিন্তু সরকারের পরিকল্পনা কি সম্পন্ন ছিল? সরকার কি অস্ত্র উদ্ধার করেছিল?

 

তিনি বলেন, সরকার কি ঢাল, তলোয়ার সন্ত্রাসীদেরকে গ্রেপ্তার করা এবং অস্ত্র উদ্ধার অভিযান শুরু করেছিল? ৫ তারিখের পর থানা লুট হয়েছিল না? ৫ তারিখের আগে বহু অস্ত্র ছিল না? তাহলে এ প্রশাসন এ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সরকার ৫ তারিখের পর আপনাদের দৃশ্যমান একটা কাজ ছিল না? জনগণের নিরাপত্তা দেওয়া, শান্তিপূর্ণ স্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করার। সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখানে খুব বেশি বেশি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।

 

জুলাই-আগস্ট গণসংযোগের পোগ্রামকে এনসিপি হঠাৎ ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ পোগ্রাম দিয়েছে- এর সমালোচনা করে এ্যানি বলেন, এনসিপি প্রোগ্রাম দিয়েছে সারা বাংলাদেশের তারা তাদের প্রোগ্রাম ছিল গণসংযোগের প্রোগ্রাম জুলাই আগস্টের। হঠাৎ করে আমরা দেখলাম গোপালগঞ্জে তারা প্রোগ্রাম দিয়েছে ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’। একদিনে দুই দিনের চেঞ্জ, এটা আমি মনে করি এটা তলিয়ে দেখা দরকার। এর পিছনে কোন হীন উদ্দেশ্য আছে কিনা। কারণ সামনে তো নির্বাচন। এ ধরনের গন্ডগোল যদি হয়ে যায়, নির্বাচনটা প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে। পরে যে নির্বাচন নিয়ে এখন পর্যন্ত এতগুলো কথা, তাহলে কিভাবে গেলেন, কিভাবে আসলেন?

 

তারেক জিয়াকে নিয়ে এনসিপি এবং জামায়াত ইসলামের নেতাকর্মীদের দেওয়া স্লোগানের সমালোচনা করে এ্যানি বলেন, আমরা এখানে অনেকেই ছাত্র রাজনীতি করেছি। আমারা ছাত্র রাজনীতি করতে করতে এখানে নেতৃত্বে এসেছি। আমার জীবনে এই স্লোগান আমি শুনি নাই। ‘কাউয়া স্লোগান’ তো ওবায়দুল কাদের থাকা অবস্থায় ছিল। কিন্তু কাউয়া স্লোগান মানুষ কখনো গ্রহণ করে নাই, পছন্দ করে নাই। আর কাউয়ার সঙ্গে জামায়াত বলেন, এনসিপি বলেন, তারেক জিয়া সম্পর্কে যে শ্লোগান দিয়েছে মুখে নেওয়ার মতো? তাহলে একসঙ্গে আন্দোলন করলাম, একসঙ্গে লড়াই করলাম, ফ্যাসিবাদের কর্তৃত্বকে রুখে দেওয়ার জন্য মাঠে ময়দান ঐক্যবদ্ধভাবে ছিলাম। ১৭ বছর ছিলাম। এরপরে সর্বশেষ জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে গণঅভ্যুত্থানে ছিলাম। তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে হবে কেন? যারা এই স্লোগান দিয়েছে, এই শ্লোগানের মধ্যে হীন উদ্দেশ্য আছে। তারেক রহমান ১৭ বছর লড়াই করেছেন। নির্যাতিত ছিলেন, সন্ন্যাসীর ভূমিকা অবতীর্ণ হয় পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। আজকে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এইভাবে স্লোগান দেওয়া, এইভাবে বক্তব্য দেওয়া, আমরা মনে করি এটা শোভা পায় না।

এ্যানি চৌধুরী বলেন, অনেকে আমাকে বলেছেন এনসিপি নতুন একটা দল, অভিজ্ঞতার অভাব আছে। কিন্তু জামায়াত ইসলামের তো অভিজ্ঞতার অভাব নাই। তাহলে আমরা কি ধরে নিতে পারি জামায়াত ইসলাম তাদেরকে মিসগাইড করেছে। ভুল পথে হাঁটার পরামর্শ দিয়েছেন।

 

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করে এ্যানি বলেন, জামায়াত ইসলামি, আপনাদের ভূমিকা কি? ৭১ সনে আপনারাতো যুদ্ধ করেন নাই। দেশ স্বাধীনে জড়িত ছিলেন না। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে এ দেশের মানুষ যুদ্ধ করেছে, লড়াই করেছে, সংগ্রাম করেছে, স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছে। রণাঙ্গনে ঝাপিয়ে পড়েছে। স্বাভাবিক কারণে একটা পার্থক্য আছে। গত আন্দোলন সংগ্রামে আপনাদের ভূমিকা ছিল, অস্বীকার করিনা। একসঙ্গে তো আন্দোলন করেছি। ভালো পরামর্শের প্রত্যাশা করেছি, আশা করেছি, কিন্তু দেন নাই।

জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাসিবুর রহমানের সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া।

 

বিশেষ অতিথি ছিলেন, বিএনপির সহ-শিল্প ও বাণিজ্যিক বিষয়ক সম্পাদক এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন অর রশদি, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাহাব উদ্দিন সাবু, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সহ-সভাপতি ওয়াহিদ উদ্দিন চৌধুরী হ্যাপি, জেলা বিএনপির সদস্য নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মনিরুল ইসলাম হাওলাদার, রায়পুর পৌর বিএনপির আহ্বায়ক এবিএম জিলানী প্রমুখ।

Facebook
X
WhatsApp

মন্তব্য করুন