পালিয়ে বেড়াচ্ছে লক্ষ্মীপুরের প্রথম শহীদ আফনানের পরিবার

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রলীগ-যুবলীগের গুলিতে লক্ষ্মীপুরে প্রথম শহীদ হন মেধাবী ছাত্র সাদ আল আফনান। আফনান হত্যার ঘটনায় তার মা বাদী হয়ে সদর থানায় মামলা করেছেন। মামলার পর থেকে গত ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছে পরিবারটি। স্বামী হারানোর তিন মাস পর ছেলে আফনানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা নাছিমা বেগম। একমাত্র মেয়ে জান্নাতুল মাওয়াকে নিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন বিভিন্ন স্থানে। এমন পরিস্থিতিতে জীবনের নিশ্চয়তা চান তারা।

লক্ষ্মীপুর ভিক্টোরি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষা দিয়েছেন সাদ আল আফনান। মৃত্যুর তিন মাস পর প্রকাশিত ফলে জিপিএ ৪.১৭ পেয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি। তার বাড়ি লক্ষ্মীপুর শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে। বাবার নাম সালেহ আহমেদ।

জানা যায়, আফনান হত্যার ঘটনায় গত বছরের ১৪ আগস্ট মা নাছিমা আক্তার বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলার পর থেকে তারা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। অভিযুক্ত সন্ত্রাসী ও তাদের আত্মীয়-স্বজনদের হুমকিতে পড়ে এখন প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা। বাসায় তালা ঝুলিয়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিতে হচ্ছে।

সরেজমিনে শহরের বাস টার্মিনাল এলাকায় আফনানের বাড়িতে গিয়ে তাদের পাওয়া যায়নি। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্রপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় একটি আশ্রিত স্থানে গিয়ে কথা হয় শহীদ আফনানের মা নাছিমা আক্তার ও বোন জান্নাতুল মাওয়ার সঙ্গে।

নাছিমা আক্তার বলেন, আমার স্বামী সালেহ আহমদ বিদেশে মারা যাওয়ার তিন মাস পর ছেলে আফনানকে হারিয়েছি। সন্ত্রাসীরা আমার ছেলেকে গুলি করে ও পিটিয়ে মেরেছে। আমি শুধু আমার ছেলে হত্যার বিচার চাচ্ছি। আমার সঙ্গে তো কারো বিরোধ নেই। কিন্তু ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে আজ আমাকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে।’

আক্ষেপ জানিয়ে নাছিমা আক্তার বলেন, ‘অনিশ্চিত জীবন নিয়ে মেয়েকে সঙ্গে করে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয়ে থাকতে হচ্ছে। মেয়ের ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে এখন আমি শঙ্কায় আছি। বিভিন্ন নম্বর থেকে আমাকে ফোন করে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, মামলা তুলে নেওয়ার জন্য লোক পাঠাচ্ছে। এক জায়গায় বেশিদিন থাকতে পারছি না। মেয়ের পড়ালেখাও বন্ধ হয়ে গেছে। প্রশাসনকে জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। প্রশাসনের কাছে আমাদের জীবনের নিশ্চয়তা চাই। সে সঙ্গে সব অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সূত্রে জানা যায়, আফনান মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। ৪ আগস্ট মাদাম ব্রিজে এক নারী আন্দোলনকারীকে বাঁচাতে গিয়ে আফনান গুলিবিদ্ধ হন। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা ধরে নিয়ে বেধড়ক মারধর করে। আফনানকে উদ্ধারের পর হাসপাতাল নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে আফনানের শহীদ হওয়ার পর ফুঁসে ওঠেন আন্দোলনকারীরা। ছাত্রলীগ-যুবলীগকে ধাওয়া করে শহরের তমিজ মার্কেটের যুবলীগ নেতা টিপুর বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আশ্রয় নিয়ে টিপুর নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করতে থাকে সন্ত্রাসীরা। ওইদিন আফনান ছাড়াও তাদের গুলিতে কাউছার হোসেন বিজয়, সাব্বির হোসেন ও ওসমান পাটোয়ারী নিহত হন। এছাড়া গুলিবিদ্ধ ও আহত হন দুই শতাধিক মানুষ।

আন্দোলনের সমন্বয়ক আরমান হোসেন বলেন, সাদ আল আফনান হত্যার ঘটনায় মামলার পর থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে পরিবারটি হুমকির শিকার হচ্ছে। তার আত্মীয়-স্বজনকেও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। মামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। বিষয়টি প্রশাসনের প্রত্যেককেই জানানো হয়েছে। কিন্তু উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর সদর থানার ওসি আবদুল মোন্নাফ বলেন, ‘আফনান হত্যার ঘটনায় তার মা নাছিমা আক্তার মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় কিছু আসামি গ্রেপ্তার আছে। অন্যদেরও গ্রেপ্তারে আমাদের কার্যক্রম চলছে। তবে বাদীকে হুমকির বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে জানালে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

সূত্র:আমার দেশ

মন্তব্য করুন