গত ৮ মাসে বিএনপির জন সমর্থন বেড়েছে, কমেছে নাকি একই আছে বলে আপনি মনে করেন?

গত ৮ মাসে বিএনপির জন সমর্থন বেড়েছে, কমেছে নাকি একই আছে বলে আপনি মনে করেন?

আমার কাছে যদি এর জবাব চান, তবে আমি নির্ধিদ্ধায় বলব কমেছে, এবং সে কমা অনেকটা জ্যামিতিক হারে।

স্বাধীন বাংলাদেশে এই মুহুর্তে রাজনীতির মাঠে যে দল গুলো এক্টিভ আছে তার মধ্যে বিএনপি সব থেকে পুরানো। গত ১৭ বছরে এই দলটির ওপর দিয়েই সব থেকে বেশি ষ্টীম রোলার চলেছে। এই দলের দলীয় প্রধান থেকে মাঠ পর্যায়ের প্রায় প্রতিটি কর্মী নির্যাতিত তারপর যখন মুক্তি আসল তখন সব থেকে অপাক্তেয় হিসাবে এই দলটি গন্য হচ্ছে এমনকি ক্ষেত্র বিশেষ ফ্যাসিষ্ট হাসিনার সাথে তুলনা করা হচ্ছে, পাশাপাশি প্রতি দিন দলটির ওপর থেকে ফ্লোটিং ভোটাররা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

এর পেছনে কারন গুলো কি? দল কি তা নিয়ে একবারও ভেবেছে?

প্রথমেই আমি বলব গত ১৭ বছর ভোট দিতে পারেনি এমন ভোটারের সংখ্যা বর্তমানে টোটাল ভোটারের ৩৬-৪০%। এই বিপুল সংখ্যক ভোটারের দিকে বিএনপি এখনো এমন কোন আশা জাগাতে পারেনি যে তাদের দিকে তারা ঝুকে আসবে। আপনাকে বুজতে হবে এই জেনারেশান আওয়ামী জগদ্দল থেকে মুক্তি পেয়েছে এক বিরাট ব্লাড শেডের মাধ্যমে।

তাদের মনোজগতে ৭১ এর স্বাধীনতা না, ২৪ এর গন অভ্যুত্থান দাগ কেটে আছে। ৭১ কে আওয়ামী লীগ এমন ভাবে পচিয়েছে যে আলাদা কোন তাৎপর্য্য এদের কাছে বহন করে না। ৭১ যদি এই বিরাট অংশের ওপর কোন প্রভাব রেখেও যেত সেটা আওয়ামীলীগ নষ্ট করে দিয়ে গেছে। প্রভাব অবশ্যই আছে তবে সেটা অতি সাধারন আর দশটা ইভেন্টের মত যেমন ৫২ র ভাষা আন্দোলন বা ৬৯ এর গন অভ্যুত্থান।

বিএনপি ভুল করে ২৪ এর গন অভ্যুত্থানকে সেভাবে হাই লাইট করতে পারেনি। ২০১৪ র আগ পর্যন্ত জামাত ইসলামীর ওপর আওয়ামী ষ্টীম রোলার চলেছে সব থেকে বেশি। কিন্তু জামাতের নেতাদের ফাসির পর জামাত আন্ডার গ্রাউন্ডে চলে যায় এবং আওয়ামীলীগের সাথে মিশে যায়, যার প্রমান আমরা পাই, ৫ ই আগষ্টের পর সাধারন ছাত্রদের মাঝ থেকে একে একে জামাত শিবিরের নেতাদের আত্মপ্রকাশের মাধ্যমে। এদিক দিয়ে বিএনপি তার স্বাতন্ত্র্য ধরে রাখে ফলশ্রুতিতে ২০১৪ পর দশ টি বছর মোটা দাগে বিএনপি ছিল আওয়ামীলীগের মুল প্রতিপক্ষ এবং প্রতিটি পদে পদে বিএনপির নেতা কর্মীরা গুম, খু্‌ন, জেল জরিমানার শিকার হয়। আবার মুল আন্দোলনে ৭৪৮ জন ( আমার যদি ভুল না হয়) বিএনপির নেতা কর্মী নিহত হবার পরো বিএনপি কে এমন ভাবে তুলে ধরা হয়েছে যে বিএনপির যেন কোন ভুমিকাই নেই।

এখানে যদি জামাত বা জানাপার প্রচারনা কে আপনি এন্টি বিএনপি প্রচারনা হিসাবে দায়ী করতে যান তার থেকে বেশি দায় যাবে বিএনপির থিংক ট্যাংকের। (যদিও বিএনপির থিংক ট্যাংক বলে এই মুহুর্তে কিছু আছে কিনা আমার জানা নাই)। থিংক ট্যাংক থাকুক বা না থাকুক দায় বিএনপিকে নিতেই হবে কারন আজকে বিএনপির জনসমর্থন প্রতিদিনই কমছে এবং সেটা আশংকা জনক ভাবে।

বিএনপি ২০২৪ এ তার শহীদদের যথাযথ মুল্যায়ন বা তাদের নিয়ে রাজনৈতিক প্রচারনা প্রায় চালায়ই নাই। যা আছে কোন অকেশানে, জনাব তারেক রহমানের নামে স্থানীয় পর্যায়ে কিছু উপহার প্রদান। আট মাস হয়ে গেল, বিএনপির কোন মিডিয়া হাউজ তৈরি হয়নি। অনলাইন অফলাইন কোন জায়গায়ই না। মিডিয়ার এই দুর্বলতা বিএনপিকে সামনের নির্বাচনে ভয়াবহ ভোগাবে।

বি এন পি এখনো আছে বিংশ শতাব্দীতে। মিডিয়ায় আব্বাস ভাইদের মত বর্ষীয়ান নেতাদের গাইড করার জন্য এই মুহুর্তে একটা এই যুগোপযোগী চৌকষ দল দরকার ছিল, যেখানে আব্বাস ভাই, মির্জা ফখরুল স্যারের মত মানুষদের বা নিচের সারির নেতাদের ও মিডিয়া উপযোগী কথা বলার মত তৈরি হতে হবে। উনাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা নিয়ে আমার কোন দ্বিমত নেই, যা আছে তা হল সময় এবং যুগের উপযোগী রাজনৈতিক টুলস নিয়ে উনাদের অজ্ঞতা। সামনে আব্বাস ভাইর ওপর আরো আঘাত আসবে, এবং এই বয়সে সেই আঘাত সামাল দেবার সক্ষমতা উনার থাকার কথা না, ফলাফল হবে মারাত্মক, আব্বাস ভাইকে যদি নিস্ক্রিয় বা প্রশ্নের মুখোমুখি দাড় করানো যায় তবে ঢাকা শহরের মধ্য ভাগ চলে যাবে মগবাজার এবং নাহিদদের নিয়ন্ত্রনে। এখানে আব্বাস ভাই টেষ্ট কেস। এটা সাকসেস হলেই একে একে বাকীদের ওপরও আঘাত আসবে।

আপনার আশে পাশে দলীয় হার্ডকোর পার্টিজানদের না, সাধারন মানুষদের জিজ্ঞেস করবেন যারা গত ১৭ বছর বিএনপিকে সমর্থন দিয়েছে দেখবেন তাদের একটা অংশ বিএনপির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

আমি ফেসবুকে লিখছি, সেই অনুযায়ী লেখা বড় হয়ে যাচ্ছে, যেটা হলে এই লেখা অনেকেই এস্কেপ করে যাবে। আমি সেটা চাচ্ছি না। লেখার ইতি টানব কয়েকটি ব্যাপার ফোকাস করে

১। বিএনপির প্রচারনার দিকে নজর দেবার জন্য এই মুহুর্তে সব থেকে বেশি নজর দিতে হবে ।
২। আন্দোলনে বিএনপির অংশ গ্রহন নিয়ে প্রচারনা এবং এই জেনারেশান কি চায় সেই আশা এবং সে অনুযায়ী ডিটেইলস প্ল্যান এনে এই ইয়াং ভোটারদের বিএনপি মুখী করতে হবে।
৩। বিএনপি গ্রামে গঞ্জে মহিলা ভোটারদের ওপর থেকে প্রভাব হারাচ্ছে। তাদের কাছে পৌছাতে হবে।
৪। দলে নিজের অবস্থান ক্ষুন্ন হবার ভয়ে নতুনদের সেভাবে কোঅপ্ট করা হচ্ছে না। অযোগ্য প্রমান হবার পরো জোর করে নিজের অবস্থান ধরে রাখছে। নতুন পুরাতন সেতুবন্ধন খুব জরুরী।

আপাতত এটুকুই। অনেক কিছুই বাদ দিলাম। চাইলে আপনি কমেন্টে লিখে যেতে পারেন। অথবা আমি ভুল হলে সেটাও যুক্তি দিয়ে তুলে দিতে পারেন। ওপরে প্রতিটি বিষয় নিজের অভিজ্ঞতা থেকে লেখা।

শোভন রেজাউনুল হক

রাজনীতিবীদ,কলামিস্ট,লেখক ও অন-লাইন একটিভিস্ট 

 

Facebook
X
WhatsApp

মন্তব্য করুন