সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: নিজস্ব প্রতিবেদক
গাজীপুর, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
রাজনৈতিক জীবনের পথে হাঁটা এক সংগ্রামী মানুষ মোহাম্মদ আলফাজ দেওয়ান। যার জীবনজুড়ে আছে আদর্শের প্রতি তীব্র ভালোবাসা, দেশের জন্য আত্মত্যাগ এবং জনগণের প্রতি গভীর দায়বদ্ধতা। টঙ্গীর দেওয়ান ভিলার ৩৮ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা এই মানুষটির সঙ্গে কথা হচ্ছিল তার জীবনের নানা দিক নিয়ে।
সংগ্রামের সূত্রপাত: শৈশব থেকে ছাত্র রাজনীতি
মোহাম্মদ আলফাজ দেওয়ানের জন্ম ১৯৮৫ সালের ২৪ আগস্ট ঢাকার উত্তরা-বাইলজুরী গ্রামের ঐতিহ্যবাহী দেওয়ান পরিবারে। তার বাবা মৃত শামসুদ্দিন দেওয়ান এবং মা খুরশিদা বেগম। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনীতির কঠিন পথ বেছে নেন।
"শৈশব থেকেই দেখতাম, আমার চারপাশে মানুষের কত কষ্ট। তখন থেকেই মনে হতো, কিছু একটা করতে হবে। ২০০২ সালে এসএসসি পাশ করার পর আর দেরি করিনি, সরাসরি ছাত্র রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলাম। এটাই ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত," দৃঢ় কণ্ঠে বলেন আলফাজ দেওয়ান।
পিতার মৃত্যু ও এক বুক যন্ত্রণা
রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃখের স্মৃতি জানতে চাইলে তার চোখ ছলছল করে ওঠে। ডি.জি.এফ.আই-এর হুমকির কারণে তাকে তখন বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে থাকতে হচ্ছিল।
"আমার বাবা মারা গেলেন। সেই খবরটা শুনলাম, কিন্তু জানাজায় যেতে পারিনি। প্রিয় পিতার কবরে এক মুঠো মাটিও দিতে পারলাম না। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় কষ্ট। কিন্তু ভাবি, এই ত্যাগ শুধু আমার একার নয়, দেশের জন্য, জনগণের মুক্তির জন্য। এ কষ্টের মূল্য একদিন দেশবাসী দেবে," আবেগী কণ্ঠে বলেন তিনি।
প্রযুক্তি থেকে রাজনীতি: জিয়া সাইবার ফোর্সের নেপথ্যে
২০০৯ সালে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করার পর প্রযুক্তিগত জ্ঞানকে তিনি রাজনৈতিক লড়াইয়ের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন। ২০১৩ সাল থেকে তিনি বিএনপির অনলাইন মিডিয়া হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং জিয়া সাইবার ফোর্স প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
"তখন আমরা অনলাইনে একটা নতুন বিপ্লব ঘটাতে চেয়েছিলাম। জিয়া সাইবার ফোর্স সেই স্বপ্নেরই বাস্তব রূপ। আজ আমি এই সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে আছি, এটা আমার জন্য গর্বের বিষয়," হাসিমুখে বলেন তিনি।
গাজীপুর ও নেতা গাজী সালাহ্উদ্দিন
বর্তমানে তিনি গাজীপুর মহানগর কৃষক দলের আহবায়ক আতাউর রহমান ও গাজীপুর মহানগর কৃষক দলের সদস্য সচিব খান জাহিদ হাসান নিপু'র কমিটিতে গাজীপুর মহানগর কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। টঙ্গী পূর্ব থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গাজী সালাহ্উদ্দিনের নেতৃত্বে তিনি সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
"গাজী সালাহ্উদ্দিন আমাদের নেতা। তিনি শুধু একজন নেতা নন, তিনি আমাদের অনুপ্রেরণা। তার নেতৃত্বে আমরা গাজীপুরকে একটি আদর্শিক ও শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর," বলেন তিনি।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: একজন সেবক হয়ে জনগণের পাশে থাকা
জীবনের এই কঠিন পথচলায় এত কিছু হারানোর পরও তিনি কী স্বপ্ন দেখেন?
"আমি নিজেকে একজন নেতা হিসেবে দেখি না, আমি একজন সেবক। দেশ আর দলের জন্য আমার সবকিছু বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত। আমার জীবন মানুষের জন্য। আমি স্বপ্ন দেখি এক নতুন বাংলাদেশের, যেখানে প্রতিটি মানুষের মুখে হাসি ফুটবে। যতদিন বেঁচে আছি, জনগণের পাশেই থাকব," দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন মোহাম্মদ আলফাজ দেওয়ান।