বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচন কমিশন এখনো আনুষ্ঠানিক তফসিল ঘোষণা না করলেও দলটির পক্ষ থেকে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ কার্যত শেষ পর্যায়ে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যেই দুই শতাধিক সম্ভাব্য প্রার্থীকে নির্বাচনী মাঠে কাজ শুরু করার সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। আরও প্রায় ৫০টি আসনে যাচাই-বাছাই চলছে।
প্রার্থী বাছাইয়ের কৌশল
দলীয় নীতি নির্ধারকরা জানাচ্ছেন, এ প্রক্রিয়ায় কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করা হয়েছে—
মাঠ জরিপ ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামত সংগ্রহ
প্রার্থীর ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তার মূল্যায়ন
দলের শীর্ষ নেতাদের মতামত
স্থানীয় পর্যায়ে কোন্দল ও বিভাজনের অবস্থা
এই সবকিছুর ভিত্তিতেই সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এরপর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্কাইপের মাধ্যমে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে মনোনয়ন প্রস্তুতির নির্দেশনা দিচ্ছেন।
ঢাকার প্রার্থীরা
ঢাকার ১৫টি আসনের মধ্যে কয়েকটি আসনে প্রার্থী নিশ্চিত হয়েছে। এর মধ্যে—
ঢাকা-৪: তানভীর আহমেদ রবীন
ঢাকা-৮: মির্জা আব্বাস
ঢাকা-১৩: ববি হাজ্জাজ (এনডিএম চেয়ারম্যান)
ঢাকা-১৬: আমিনুল হক
ঢাকা-১৭: আন্দালিব রহমান পার্থ (বিজেপি চেয়ারম্যান)
ঢাকার অন্যান্য আসনের ক্ষেত্রেও নাম চূড়ান্ত হওয়ার পথে রয়েছে।
ঢাকার বাইরের প্রার্থীরা
উত্তরাঞ্চল থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত একাধিক আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেমন—
পঞ্চগড়-১: ব্যারিস্টার নওশাদ জমির
পাবনা-২: সেলিম রেজা হাবিব
চুয়াডাঙ্গা-১: শামসুজ্জামান দুদু
ঝিনাইদহ-৪: সাইফুল ইসলাম ফিরোজ
যশোর-৩: অনিন্দ্য ইসলাম অমিত
খুলনা-৪: আজিজুল বারী হেলাল
ভোলা-৩: মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ
বরিশাল-১: জহির উদ্দিন স্বপন
ময়মনসিংহ-৪: ওহাব আকন্দ
সুনামগঞ্জ-১: মাহবুবুর রহমান
এছাড়া আরও অনেক আসনে যাচাই-বাছাই চলমান।
তরুণ প্রার্থীদের অগ্রাধিকার
এবার বিএনপি তরুণ নেতৃত্বকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও শীর্ষ নেতাদের মধ্য থেকে একাধিকজন প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পেতে পারেন। এর মাধ্যমে তরুণদের আকৃষ্ট করার পাশাপাশি দলকে নতুন রূপ দেওয়ার কৌশল নিয়েছে বিএনপি।
ঐক্যের বার্তা ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা
মনোনয়ন বণ্টন নিয়ে দ্বন্দ্ব যাতে না হয়, সেদিকেও নজর রাখছেন তারেক রহমান। তিনি প্রার্থীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন—
দলের সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে
মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে
বিভাজন বা বিশৃঙ্খলা হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে
উদাহরণ হিসেবে বরিশাল-৫ আসনে যেখানে একাধিক প্রভাবশালী নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী, সেখানে সবার সঙ্গে কথা বলে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
সামগ্রিক বিশ্লেষণ
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপির জন্য নির্বাচন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকায় বিএনপিকে নতুন করে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। এজন্য তারা একদিকে অভিজ্ঞ নেতাদের ওপর নির্ভর করছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মকে সামনে নিয়ে আসছে। একইসঙ্গে দলের ভেতরে ঐক্য ধরে রাখার জন্য তারেক রহমান সক্রিয়ভাবে প্রত্যেক প্রার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপির এই প্রস্তুতি দেখাচ্ছে যে, তারা আসন্ন নির্বাচনে সর্বশক্তি নিয়েই মাঠে নামতে চাইছে। তবে শেষ পর্যন্ত প্রার্থিতা নির্ভর করবে জোট রাজনীতি, আসন সমঝোতা এবং মাঠের বাস্তবতার ওপর।