
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন যে টানাপোড়েন চলছে, তার মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দুর্গাপূজা উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়কে দেওয়া শুভেচ্ছা বার্তাটি কেবল একটি আনুষ্ঠানিক শুভেচ্ছা নয়, বরং রাজনৈতিক ও সামাজিক বার্তাও বহন করে।
তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন— “ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার”। এই উক্তিটি বাংলাদেশের সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলেও রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রায়ই প্রশ্নবিদ্ধ হয়। অতীতে বিভিন্ন সময়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বা উৎসবকেন্দ্রিক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে, যা রাজনৈতিক পরিবেশকে উত্তপ্ত করেছে। তারেক রহমান সেই প্রেক্ষাপটের দিকেই ইঙ্গিত করেছেন, যখন তিনি ‘ফ্যাসিবাদী শাসনামলে’ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টার অভিযোগ তোলেন।
এই বক্তব্যে তিনটি স্তর রয়েছে—
1. সংখ্যাগরিষ্ঠ ও সংখ্যালঘু উভয়ের উদ্দেশে বার্তা:
তিনি হিন্দু সম্প্রদায়কে উৎসব নির্বিঘ্নে উদযাপনের আহ্বান জানিয়ে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠদের দিকেও এক ধরনের দায়িত্ববোধের বার্তা দিয়েছেন— যাতে সম্প্রীতি রক্ষা পায়।
2. রাষ্ট্রের প্রতি প্রত্যাশা:
তারেক রহমান সরাসরি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক থাকার আহ্বান করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, সংবিধান সবার নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিলেও তা কার্যকর করা সরকারের দায়িত্ব।
3. রাজনৈতিক কৌশল:
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি এখন গণতন্ত্র ও অধিকার রক্ষার কথাই বেশি বলছে। এই বার্তায় তিনি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা প্রশ্নে অবস্থান স্পষ্ট করে বিএনপিকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সহনশীল ভাবমূর্তি দিতে চেয়েছেন।
হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে অমুসলিম নাগরিকদের অধিকার রক্ষার কথা বলা ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। এতে দেখা যায়, তারেক রহমান কেবল রাজনৈতিক নয়, নৈতিক-ধর্মীয় দিক থেকেও যুক্তি তুলে ধরছেন।
সব মিলিয়ে এই শুভেচ্ছা বার্তাটি কেবল আনুষ্ঠানিক নয়, বরং বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি, নাগরিক নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি নিয়ে একটি বড় আলোচনার দরজা খুলে দিয়েছে। ভবিষ্যতের নির্বাচনী ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে এই ধরনের বক্তব্য বিএনপির নরম, অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতির ইঙ্গিত হিসেবেও ধরা যেতে পারে।









